Tuesday 28 May 2019

যে কারণে প্রস্তুতি ম্যাচে হারতে চান মাশরাফি

বাংলাদেশের অধিনায়ক মনে করেন, প্রস্তুতি ম্যাচে হারলে নিজেদের ভুলগুলো খুব ভালোভাবে চোখে পড়ে, আসল ম্যাচের যেটা শুধরে নেওয়া যায়।
মাশরাফি বিন মুর্তজা কী ‘জিনিস’, এই কদিনে বুঝে গেছেন ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের নিরাপত্তাকর্মীরা! কাল সকালে যেমন আকসুর (দুর্নীতি দমন ইউনিট) এক কর্মকর্তা সোফিয়া গার্ডেনে এসেই জড়িয়ে ধরলেন বাংলাদেশ অধিনায়ককে। আকসুর ওই কর্মকর্তার সঙ্গে যখন ঠাট্টা-রসিকতায় মেতে উঠেছেন মাশরাফি, ওপর থেকে সিঁড়ি বেয়ে নেমে এলেন এক নারী নিরাপত্তাকর্মী। অধিনায়ক আকসুর কর্তাকে সাবধান করলেন, ‘আমাকে যেভাবে জড়িয়ে ধরলে, ওকে আবার একইভাবে ধোরো না!’
শুনে আকসু কর্তা হেসেই বাঁচেন না! অথচ আকসু শব্দটা শুনলেই এখন ক্রিকেটাররা কেন যেন শক্ত হয়ে যান। যতই সৎ থাকুন, ঘাড়ের কাছে বন্দুকের নল তাক করা থাকলে একটু ভয় কাজ করবেই। মাশরাফির কাছে আকসু কিংবা পাথুরে মুখের নিরাপত্তাকর্মী-কিছুই ভীতিকর নয়। বাংলাদেশের সাংবাদিকদের দেখিয়ে যেমন নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে রসিকতা করেন, ‘দে আর ব্যাড গাইজ, হার্মফুল ফর আস! কিপ আইস অন দেম।’ মাশরাফির কথা শুনে নিরাপত্তাকর্মীরা শুধু হো হো করে হাসেন। বাংলাদেশ ওয়ানডে অধিনায়কের নির্ভার চেহারাটা দেখে বোঝার উপায় নেই, আজ ভারতের বিপক্ষে একটা ম্যাচ খেলতে নামবে বাংলাদেশ। অবশ্য ম্যাচটা শুধুই প্রস্তুতি নেওয়ার। মাশরাফি হয়তো বলবেন, এ ম্যাচ নিয়ে এত সিরিয়াস হওয়ার কী আছে?
প্রস্তুতি ম্যাচ নিয়ে তিনি কখনোই সিরিয়াস নন, বরং একটা সংস্কার লালন করছেন দীর্ঘদিন। মাশরাফি প্রস্তুতি ম্যাচ হারতেই চান! কেন চান, সেটির দুটি যুক্তি আছে তাঁর কাছে। প্রথমত, হারলে নিজেদের ভুলগুলো খুব ভালোভাবে চোখে পড়ে, আসল ম্যাচের আগে যেটা শুধরে নেওয়া যায়। দ্বিতীয়ত, মানসিক জড়তা কেটে যায়। আরেকভাবে বললে, ‘কুফা’ কেটে যায়!
অনুশীলনের ফাঁকে ড্রেসিংরুমের নিচে দাঁড়িয়ে মাশরাফি মনে করিয়ে দেন ২০১৫ বিশ্বকাপের কথা। ব্রিসবেনে প্রায় দুই সপ্তাহ প্রস্তুতি ক্যাম্পের পর বাংলাদেশ টানা চারটা প্রস্তুতি ম্যাচ হেরেছিল। বাংলাদেশকে তাই বিশ্বকাপ শুরু করতে হয়েছিল টানা হারের যন্ত্রণা নিয়ে। ‘টানা হেরেছিলাম বলে অনেক কথা উঠেছিল। বিশ্বাস করবেন কি না জানি না, আমি খুব খুশি হয়েছিলাম! প্রস্তুতি ম্যাচ হেরেছিলাম বলেই তো বিশ্বকাপটা ভালো খেলেছিলাম!’ -মাশরাফি ফিরে যান চার বছর আগে।
এই ইংল্যান্ডে ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও বাংলাদেশ ভারত-পাকিস্তানের বিপক্ষে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচই হেরেছিল। এবার অবশ্য কমই প্রস্তুতি ম্যাচ খেলছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটা বৃষ্টিতে ভেসে গেছে। আজ কার্ডিফে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের পর শুরু হবে তাদের বিশ্বকাপ অভিযান। মাশরাফি অবশ্য এত প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার প্রয়োজনীয়তাও দেখেন না, ‘পাঁচটা আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার পর প্রস্তুতি ম্যাচ না খেললেও চলে। হ্যাঁ, কোচের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তিনি কিছু খেলোয়াড়কে দেখতে চান। কয়েকটি পজিশন নিয়ে আরও নিশ্চিত হতে চান। তাঁর দৃষ্টিকোণ থেকে প্রস্তুতি ম্যাচ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু খেলোয়াড়েরা তো টানা খেলার মধ্যেই আছে। জানেন, ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে বারবার বৃষ্টিতে ম্যাচ পেছাচ্ছিল বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ গুরুত্বপূর্ণ অনেক খেলোয়াড়কে মাঠেই নামাতে চায়নি। যদি চোটে পড়ে যায় কেউ! চোটে পড়ার আশঙ্কা তো আমাদেরও ছিল।’
মাশরাফির কাছে এখন মানসিকভাবে চিন্তামুক্ত আর শতভাগ ফিট থাকাটাই বড় টনিক। তাই বলে আজ ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ হারতে মাঠে নামবে? যে ম্যাচই হোক, হারতে কোনো দল খেলতে নামে না। মাশরাফিরাও নামবেন না। তবে হ্যাঁ, চাপমুক্ত হয়ে খেলবেন। যে ম্যাচে জয়-পরাজয়ের গুরুত্ব নেই, সেটিতে আবার চাপ কী!

যুক্তরাজ্যে বিচ্ছেদপন্থীদের জয়জয়কার

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পার্লামেন্টইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পার্লামেন্টইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ কার্যকর না হওয়ায় ক্ষুব্ধ বিচ্ছেদপন্থীরা মাত্র ৬ সপ্তাহ আগে গঠন করেছিলেন ‘ব্রেক্সিট পার্টি’। যুক্তরাজ্যে ইইউ পার্লামেন্ট নির্বাচনে সেই ব্রেক্সিট পার্টিরই জয়জয়কার হলো। সোমবার (২৭ মে) ইইউ পার্লামেন্ট নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হয়।
প্রকাশিত ফলাফলে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ব্রেক্সিট-বিরোধী লিবারেল ডেমোক্র্যাট দল (লিবডেম)। আর ভরাডুবি হয়েছে ব্রেক্সিট প্রশ্নে নমনীয় অবস্থান বজায় রাখা ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ ও বিরোধী দল লেবারের। এই নির্বাচনের ফল আবারও জানান দিল ব্রেক্সিটের পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তরাজ্যের মানুষ কতটা কট্টরভাবে বিভক্ত।
এর আগে ২৩ থেকে ২৬ জুন ইইউ সদস্যভুক্ত ২৯টি দেশে ক্রমান্বয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। যুক্তরাজ্যে ভোট হয় ২৩ মে।
যুক্তরাজ্যে ১২টি অঞ্চল থেকে মোট ৭৩ জন এমইপি (মেম্বার অব ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট) নির্বাচিত হয়। সোমবার স্থানীয় সময় দুপুর পর্যন্ত প্রকাশিত ১০টি অঞ্চলের ফলাফলে দেখা যায়, ৩২ শতাংশ ভোট পেয়ে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে ব্রেক্সিট পার্টি, যারা কোনো চুক্তি ছাড়াই ইইউর সঙ্গে বিচ্ছেদের পক্ষে। দলটির ২৮ জন এমইপি নির্বাচিত হয়েছেন। ঘোষিত ১০টি অঞ্চলের ফলাফলে ৯টিতেই সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছে কট্টর ইইউ-বিরোধী নেতা নাইজেল ফারাজের ব্রেক্সিট পার্টি। লন্ডন ছাড়া ইংল্যান্ডের সবখানেই শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে তারা। দলটি ওয়েলসেও সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছে।
২০ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে লিবডেম। দলটির বিজয়ী এমইপির সংখ্যা গতবারের চেয়ে ১৪ জন বেড়ে হয়েছে ১৫ জন।
অন্যদিকে ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন কিংবা পুনরায় গণভোট দিতে ব্যর্থ ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের মাত্র ৩ জন প্রার্থী জয়ী হয়েছেন, যা গতবারের তুলনায় ১৫ জন কম। ভোটের হিসাবে ক্ষমতাসীনরা এবার পিছিয়ে পঞ্চম অবস্থানে।
ব্রেক্সিট প্রশ্নে ধোঁয়াশা অবস্থান বজায় রাখা লেবার দলের এমইপি সংখ্যা এবার ৮ জন কমে হয়েছে মাত্র ১০ জন। তাদের ভোটের হার কমেছে ১১ শতাংশ।
স্কটল্যান্ডের ৬ জন এমইপির মধ্যে স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টির ৩ জন এবং ব্রেক্সিট পার্টি, লিবডেম ও কনজারভেটিভ পার্টির একজন করে এমইপি জয়ী হবেন বলে আভাস আছে। আর নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের ফলাফল জানা যাবে মঙ্গলবার। সেখানে মাত্র একজন এমইপি নির্বাচিত হবেন।
ব্রেক্সিট পার্টির নেতা নাইজাল ফারাজ বলেন, কথিত প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলগুলো ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত ব্রেক্সিট গণভোটের রায় বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে। সে কারণেই মাত্র ৬ সপ্তাহ আগে গড়ে ওঠা ব্রেক্সিট পার্টির এমন বিজয়। তবে লিবডেম বলছে, তাদের দেওয়া প্রতিটি ভোট ব্রেক্সিট বাতিলের জন্য।
ব্রেক্সিট প্রশ্নে নমনীয় অবস্থানে থাকা দলগুলোর সম্মিলিত ভোটের হার ৪০ শতাংশ। এই হিসাব দেখিয়ে 

মোদির শপথে সার্ক নয় বিমসটেক নেতারা আমন্ত্রিত

নরেন্দ্র মোদি। ছবি: রয়টার্সনরেন্দ্র মোদি। ছবি: রয়টার্সঅন্যান্য প্রতিবেশীদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে নরেন্দ্র মোদির দ্বিতীয় শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে ডাকা হলো না। পাকিস্তানকে এড়াতে আগামী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটায় মোদির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হলো ‘বিমসটেক’ সদস্যভুক্ত দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের। পাকিস্তান বিমসটেকের সদস্য নয়।
আজ সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমার জানান, প্রতিবেশী প্রথম নীতি মেনে এই আমন্ত্রণ। বিমসটেক সদস্যদের মধ্যে ভারত ছাড়া রয়েছে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, নেপাল ও ভুটান। দক্ষিণ এশিয়ায় সহযোগিতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সার্ক অকার্যকর হয়ে যাওয়ায় বিমসটেক-কে জোরালো করার দিকে এখন ভারতের নজর বেশি।
বিমসটেক সদস্য দেশ ছাড়াও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে কিরগিজস্তানের প্রেসিডেন্ট ও মরিশাসের প্রধানমন্ত্রীকে। কিরগিজস্তানের প্রেসিডেন্ট সুরনবে জিনবিকভ বর্তমানে সাংহাই কো-অপারেশনস অর্গানাইজেশন–এর সভাপতি। মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী প্রবীণ জুগনাথ সম্প্রতি প্রবাসী ভারতীয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
‘বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেকটোরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন’ বা ‘বিমসটেক’ সদস্যদের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের আমন্ত্রণ জানানোর মধ্য দিয়ে মোদি সরকারের ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতিকে গুরুত্ব দেওয়া হলো। একই সঙ্গে এর মধ্য দিয়ে পশ্চিম প্রতিবেশী পাকিস্তানকেও এড়ানো সম্ভবপর হলো। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান একদিন আগেই ফোন করে মোদিকে অভিনন্দিত করেন। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আলোচনার মধ্য দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথাও বলেন। সেই থেকে জল্পনা চলছিল, আগেরবারের মতো এবারেও পাকিস্তানসহ প্রতিবেশী দেশগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হবে কি না।
পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের দ্বিপক্ষীয় আলোচনা অনেক দিন ধরেই বন্ধ রয়েছে। ভারতের ঘোষিত নীতি, সন্ত্রাসবাদ ও আলোচনা এক সঙ্গে চলতে পারে না। লোকসভার ভোটের আগে কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলায় ৪০ জওয়ানের মৃত্যুর পর পাকিস্তানের বালাকোটে সন্ত্রাসীদের শিবিরে ভারত আক্রমণ চালিয়েছিল। ভোটের প্রচারেও সেটা বড় হয়ে ওঠে। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হবে কি না তা নিয়ে চলছিল জল্পনা। প্রথম দফার শপথে তৎকালীন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি।

স্প্যাম মেইলে ১০ লাখ ডলার

যাঁরা ই–মেইল ব্যবহার করেন, তাঁরা জানেন, মাঝেমধ্যেই ‘আপনি ১০ লাখ মার্কিন ডলার জিতেছেন’ বা ‘লটারি জিতেছেন’–জাতীয় ই–মেইল এসে থাকে। এসব যে ধাপ্পাবাজি বা হ্যাকার-প্রতারক চক্রের পাতা ফাঁদ—ব্যবহারকারীরা এত দিনে তা বুঝে গেছেন। অনেক সময় কোম্পানির প্রচারণা বিজ্ঞাপনের অংশ হয় এগুলো। এসব ই–মেইলকে ‘স্প্যাম’ বলা হয়। সম্প্রতি এ রকম এক স্প্যাম ই–মেইল খুলে ভাগ্যই খুলে গেছে মার্ক লিচফিল্ড নামের এক ব্যক্তির।
লিচফিল্ডের ইয়াহু মেইলে হঠাৎ একদিন ই–মেইল আসে, তিনি ১৫ লাখ ডলার অর্থ পুরস্কার পেয়েছেন। মেইলটি খোদ ইয়াহু কর্তৃপক্ষ পাঠিয়েছে। এতে লেখা ছিল, ‘আমরা আপনাকে কিছু অর্থ দেব। আপনি কি তা চান?’ কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের ওয়েবসাইটে একটি ‘বাগ’ ধরে দেওয়ায় পুরস্কারটি দিচ্ছে তারা।
ইয়াহুসহ এখন সব বড় অনলাইন-জায়ান্টরা তাদের ওয়েব কোডে ত্রুটি ধরিয়ে দিতে পারলে এমন অর্থ পুরস্কার দিয়ে থাকে। এসব ত্রুটিকে ‘বাগ’ বলে।
লিচফিল্ড বলেন, তিনি ওই ত্রুটি ধরে দেওয়ার কথা ভুলেই গিয়েছিলেন। কাজটি নিতান্তই স্বেচ্ছাসেবকের মতো করেছিলেন তিনি। লিচফিল্ড বলেন, যে কেউই কাজটি করতে পারেন। এর জন্য কোডিং জ্ঞানও থাকতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। তিনি নিজেও কোডিং পারেন না।

মার্কিন রাজনীতি এখন কেবল কাদা–ছোড়াছুড়ি

ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল ছবিডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল ছবিমার্কিন রাজনীতির একটি অলিখিত নিয়ম ছিল, দেশের বাইরে গিয়ে কেউ নিজ দেশের কারও বিরুদ্ধে নিন্দা করবেন না। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সে নিয়ম আগেই ভঙ্গ করেছেন। জাপান ভ্রমণে গিয়ে আবারও সেই কাজ করলেন। টোকিওতে এক সরকারি সফরে গিয়ে তিনি বলেছেন, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একজন কম বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ, তাঁর আইকিউকম, কোরীয় নেতা কিম জং-উনের এই বক্তব্য তিনি সমর্থন করেন।
ট্রাম্প বলেছেন, ‘জো বাইডেনকে নিয়ে কিম জং যা বলেছেন, তা ইতিহাসের ভিত্তিতেই বলেছেন। তাঁর কথার সঙ্গে আমি একমত।
ট্রাম্প কীভাবে নিজ দেশের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্টকে নিয়ে বিদেশের একজন একনায়ককে সমর্থন করছেন—এমন এক প্রশ্ন করা হলে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি কারও প্রতি পক্ষপাত করছি না, কিন্তু এ কথা আমি বলব, জো বাইডেন সম্পূর্ণ ব্যর্থ ছিলেন। প্রেসিডেন্ট ওবামার প্রশাসনের অংশ হিসেবে তাঁরা অনেক বিষয়েই সম্পূর্ণ ব্যর্থ হন।’
গতকাল সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় অন্য প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, তিনি বাইডেনের ‘ফ্যান’ বা ভক্ত নন।

এর আগের দিন, অর্থাৎ রোববার এক টুইটে ট্রাম্প জানান, বাইডেনের আইকিউকম, কিম জং-উনের এই কথা শুনে তিনি হেসে ফেলেছেন।
বিদেশের মাটিতে নিজ দেশের রাজনীতিকের প্রতি বিদ্রূপাত্মক মন্তব্যের জন্য অনেকেই ট্রাম্পের সমালোচনা করেছেন। ডেমোক্রেটিক পার্টির কংগ্রেস সদস্য ও প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী সেথ মৌলটন সিএনএনকে বলেন, ট্রাম্পের এই মন্তব্য প্রমাণ করে, তিনি মোটেই দেশপ্রেমিক নন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ক্রিমিনাল বা অপরাধী এমন লোক প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন, যেমন রিচার্ড নিক্সন। কিন্তু তিনি দেশপ্রেমিক নন, এ কথা কেউ বলবে না।
রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য কিনজিঙ্গার বলেছেন, ট্রাম্প বিদেশের মাটিতে জো বাইডেন সম্বন্ধে যে মন্তব্য করেছেন, তা ঠিক নয়।
গতকাল ছিল মেমোরিয়াল ডে। এই দিন দেশের জন্য যাঁরা আত্মত্যাগ করেছেন, তাঁদের স্মরণ করা হয়। এক টুইটে কিনজিঙ্গার বিস্ময় প্রকাশ করেন, এমন এক দিনে একজন একনায়কের পক্ষ নিয়ে বাইডেনের বিরুদ্ধে কটু কথা বলার পথ বেছে নিয়েছেন ট্রাম্প।
সাম্প্রতিক সময়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও বিরোধী ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে কথা–চালাচালি ক্রমে প্রকাশ্য কাদা–ছোড়াছুড়িতে পরিণত হয়েছে। গত সপ্তাহে ডেমোক্রেটিক স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ট্রাম্পের মানসিক সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, তাঁকে সামলানোর জন্য পরিবারের ভেতর থেকে কারও উচিত এগিয়ে আসা। উত্তরে ট্রাম্প পেলোসির বুদ্ধিমত্তা নিয়ে প্রশ্ন করেন। নিজেকে একজন অত্যন্ত ধীরমস্তিষ্ক ‘জিনিয়াস’ অভিহিত করে ট্রাম্প বলেন, মেক্সিকো ও কানাডার সঙ্গে যে বাণিজ্য চুক্তি হয়েছে, তা বোঝার ক্ষমতা পেলোসির নেই।
উত্তরে পেলোসি এক টুইটে মন্তব্য করেন, ‘“ধীরমস্তিষ্ক এই জিনিয়াস” যখন একজন প্রেসিডেন্টের মতো ব্যবহার করা শুরু করবেন, তখন তাঁর সঙ্গে অবকাঠামোসহ অন্যান্য বিষয়ে কথা বলার জন্য আমি প্রস্তুত।’

ত্রিদেশীয় সফরে জাপানের পথে প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান, সৌদি আরব ও ফিনল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সফরের উদ্দেশে আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানী ঢাকা ত্যাগ করেছেন। ছবি: বাসস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান, সৌদি আরব ও ফিনল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সফরের উদ্দেশে আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানী ঢাকা ত্যাগ করেছেন। ছবি: বাসসপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান, সৌদি আরব ও ফিনল্যান্ডের উদ্দেশে আজ মঙ্গলবার সকালে ঢাকা ছেড়েছেন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিশেষ একটি ফ্লাইট প্রধানমন্ত্রী তাঁর সফরসঙ্গীদের নিয়ে সকাল ৯টা ১০ মিনিটে জাপানের রাজধানী টোকিওর উদ্দেশে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যায়।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, তিন বাহিনী প্রধান, ডিপ্লোমেটিক কোরের ডিন এবং উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান।
প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানটির টোকিওর স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় হেনেদা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের কথা রয়েছে। বিমানবন্দরে জাপানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তোশিকো আবে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর সফরের প্রথমে জাপানে ২৮ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত অনুষ্ঠেয় ফিউচার এশিয়া শীর্ষক ২৫তম আন্তর্জাতিক সম্মেলন ভাষণ দেবেন। শেখ হাসিনা সেখানে একটি চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন। সেখানে তাঁর সম্মানে বাংলাদেশি কমিউনিটির দেওয়া একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগদান করবেন। এ ছাড়া তিনি হোলি আর্টিজানে হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করবেন। তিনি জাপানের ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
জাপানে সফর শেষ করে শেখ হাসিনা জেদ্দার উদ্দেশে টোকিও ছাড়বেন। তিনি আগামী ৩ জুন পর্যন্ত সেখানে থাকবেন।

সৌদি আরব সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) ১৪তম অধিবেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। সেখানে মক্কাতে ৩১ মে ‘মক্কা সামিট: টুগেদার ফর দ্য ফিউচার’ শীর্ষক ইসলামি শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী সেখানে পবিত্র ওমরাহ পালন করবেন।
সৌদি আরব সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৩ জুন ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকির উদ্দেশে জেদ্দা ত্যাগ করবেন। প্রধানমন্ত্রী ৪ জুন ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
জাপান সফরের প্রথম দিনে আজ প্রধানমন্ত্রী জাপানি সময় ৮টা ৩০ মিনিটে হোটেল ওকুরাতে কমিউনিটি অভ্যর্থনায় যোগ দেবেন। কাল সকালে হোটেল নিউ অটনিতে প্রধানমন্ত্রী জাপানি ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ ও প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে প্রাতরাশ গোলটেবিল সভা করবেন। কালই আবার গুলশানের হোলি আর্টিজানে ক্ষতিগ্রস্ত জাপানিরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এরপর বিকেলে তিনি জাপানি প্রধানমন্ত্রী সিনজো আবের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা সভায় মিলিত হবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপানের প্রধানমন্ত্রীর অফিসে পৌঁছালে সেখানে তাঁকে গার্ড অব অনার দেওয়া হবে। আলোচনা শেষে দুই দেশের মধ্যে চুক্তিসই এবং যৌথ ঘোষণা পড়া হবে।
সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রাষ্ট্রীয় নৈশভোজসভায় অংশগ্রহণ করবেন।
আগামী বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী ইমপেরিয়াল হোটেলে নিক্কেই সম্মেলনে যোগ দেবেন। সেখানে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির বিন মোহাম্মদ মূল প্রবন্ধ পাঠ করবেন। শেখ হাসিনা পরে একই জায়গায় ভবিষ্যৎ এশিয়াবিষয়ক ২৫তম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নেবেন এবং ভাষণ দেবেন। পরে জাইকার সভাপতি শিনিচি কিতাওকা প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানস্থলে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নিক্কেই কনফারেন্স নৈশভোজে অংশ নেবেন। সেখানে জাপানের প্রধানমন্ত্রী থাকবেন প্রধান বক্তা।
শুক্রবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে (জাপান সময়) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মক্কায় ওআইসির ইসলামিক শীর্ষ সম্মেলনের ১৪তম অধিবেশনে যোগদানের জন্য জেদ্দার উদ্দেশে হানেদা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করবেন। জাপানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তোশিকো আবে বিমানবন্দরে তাঁকে বিদায় জানাবেন।
শেখ হাসিনা শুক্রবার স্থানীয় সময় ৫টা ২৫ মিনিটে বাদশাহ আবদুল আজিজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছবেন এবং সন্ধ্যায় তিনি মক্কার সাফা প্রাসাদে ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগদান করবেন।
৩১ মে মক্কায় ওআইসির ইসলামিক সম্মেলনের ১৪তম অধিবেশনের আয়োজন করেছে সৌদি আরব। ১ জুন দুপুর সাড়ে ১২টায় প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনের প্রথম কর্ম অধিবেশনে অংশ নেবেন এবং দেড়টায় অংশ নেবেন দ্বিতীয় কর্ম অধিবেশনে।
প্রধানমন্ত্রী বেলা আড়াইটায় সমাপনী অধিবেশনে এবং পরে সাফা প্রাসাদে সুহুর ভোজে অংশ নেবেন। সন্ধ্যায় তিনি ওমরাহ পালন করবেন।
প্রধানমন্ত্রী আগামী ২ জুন সকালে বিমানযোগে মদিনার উদ্দেশে জেদ্দা ত্যাগ করবেন এবং হজরত মুহাম্মদের (সা.) রওজা মোবারকে ফাতেহা পাঠ করবেন।
সন্ধ্যায় তিনি বিমানযোগে জেদ্দার উদ্দেশে মদিনা ত্যাগ করবেন। ৩ জুন দিবাগত রাত ১টা ১০ মিনিটে তিনি ফিনল্যান্ডের হেলসিংকির উদ্দেশে জেদ্দা ত্যাগ করবেন। ৪ জুন তিনি ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তাঁর সরকারি বাসভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। ৭ জুন ফিনল্যান্ডের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিটে ফিনল্যান্ডের বিমান ফিনএয়ারযোগে প্রধানমন্ত্রী ঢাকার উদ্দেশে হেলসিংকি বিমানবন্দর ত্যাগ করবেন।
একই দিনে তিনি দেশে ফিরে আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

ট্রাম্প কি কৃতিত্ব পাবেন?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।চীনকে ঠেকাতে ট্রাম্প যে পদক্ষেপ নিয়েছেন, এতে তাকে কি কৃতিত্ব দেওয়া যায়? বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের আগের প্রেসিডেন্টরা যা পারেননি, ট্রাম্প সেটাই করে দেখিয়েছেন। চীনকে বশে আনতে টুঁটি চেপে ধরেছেন দেশটির প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের। ট্রাম্প–সমর্থকেরা বলছেন, তাঁর নীতিতেই বশ মানবে চীন। বাণিজ্য চুক্তি থেকে লাভবান হবে যুক্তরাষ্ট্র।
দ্য আটলান্টিকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করে বিদেশি শত্রুদের তৈরি যন্ত্রাংশ যুক্তরাষ্ট্র ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তাঁর নির্দেশ অনুসরণ করে চীনের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়েসহ কয়েক ডজন প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। জাতীয় নিরাপত্তা বিবেচনায় এসব প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রে যন্ত্রাংশ বেচাকেনা করা ও সেবা পরিচালনা করতে পারবে না। এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী।
ট্রাম্পের সমর্থকেরা প্রচার করছেন যে কেবল ট্রাম্পই চীনের ওপর এতটা কঠোর হতে পারেন এবং পেরেছেন। রোনাল্ড রিগ্যান যেভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে কঠোর হতে পেরেছিলেন, ট্রাম্পকে এখন তাঁর সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে যে নীতিতে অগ্রসর হচ্ছে, এটাকে তাঁর ‘বিজয়’ বলা যায়।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনা বিভিন্ন পণ্যের বিরুদ্ধে শুল্কারোপের বিষয়টি অনেক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের প্রধান সমর্থন করছেন। দীর্ঘদিনের দুর্দশার পর একে মার্কিন ব্যবসার জন্য বড় সুযোগ দেখছেন তাঁরা। নিউইয়র্ক টাইমসও বলছে, চীনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে চলা চুক্তির বহুমুখী ব্যর্থ প্রচেষ্টার বিষয়টি উল্টে দিয়েছেন ট্রাম্প।
প্রশ্ন উঠছে, চীনের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের ‘জয়’ পূর্বসূরিদের চেয়ে পৃথক? যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসার সব শর্ত পূরণ না করলেও যুক্তরাষ্ট্রের আগের অনেক প্রেসিডেন্ট চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবসার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। ২০০০ সালে স্বাভাবিক বাণিজ্য সম্পর্কের মর্যাদাও দেওয়া হয়। তাঁরা ভেবেছিলেন, চীনকে বৈশ্বিক ক্লাবের সদস্য করা হলে চীন হয়তো ‘দায়িত্বশীল অংশীদার’ হবে। কিন্তু চীন সুযোগ নিয়ে নিজের পথেই চলছে। তোয়াক্কা করেনি অন্যের নিয়মনীতি।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পই প্রথম চীনা চ্যালেঞ্জের বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। মার্কিন নীতি তোয়াক্কা না করে চীনের বেড়ে ওঠার বিষয়টিতে প্রক্রিয়াগত চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে বলে মনে করেছেন তিনি। অন্য কোনো রাজনীতিবিদ তা বুঝতে পারেননি। অভিযোগ উঠেছে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে মেধাস্বত্ব চুরি করছে চীন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি জোর স্থানান্তর করছে তারা। রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত কোম্পানিগুলোর সম্পর্কে তথ্য দিচ্ছে না। নিজ দেশের মুদ্রা নিয়ে ষড়যন্ত্র করে বাণিজ্যিক সুবিধা নেওয়ার মতো কাজগুলো করছে দেশটি।
এর আগে ওবামা প্রশাসন চীনকে ১৯ জাতি ট্রান্সপ্যাসিফিক পার্টনারশিপ তৈরি করে নতুন নিয়মে বাঁধার একটা চেষ্টা করেছিল। তবে কোনো প্রেসিডেন্ট চীনের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার সাহস পাননি। কিন্তু ট্রাম্প পেরেছেন। তাঁর কৌশল প্রয়োগ করলে তিনি সফল হবেন—এ বিশ্বাস তাঁর আছে।
ট্রাম্পের বাণিজ্য ও উৎপাদন নীতিমালাবিষয়ক পরিচালক পিটার নাভারোর ভাষ্য, ‘বাস্তবতা হচ্ছে, যতক্ষণ না পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট বাণিজ্য নিয়ে কঠোর হন ও আলোচনা করার বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ না নেন, ওই লোকগুলো আমাদের সঙ্গে কথা বলতে চায় না। তাদের কথা বলার কোনো আগ্রহ নেই। কেউ কথা বলতে আসে না। কারণ, তারা লাভবান হচ্ছে আর আমরা লোকসান দিচ্ছি।’
তবে ট্রাম্পের এ কৌশল নিয়ে সমালোচনাও হচ্ছে। ফোর্বসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্পের ‘পাগলামি পদ্ধতি’ তখনই কার্যকর হবে, যখন অপর পক্ষ আলোচনার টেবিলে এসে যৌক্তিক দাবি করবে। তাঁর আচরণ অনেক দেশকে দেনদরবারের টেবিলে এনেছে। কিন্তু এরপর তিনি যে দাবি করেছেন, তা মার্কিন স্বার্থ রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। তিনি যেসব পদ্ধতি ব্যবহার করছেন, তা তাঁর পূর্বসূরিদের তুলনায় অর্থনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। আগের প্রেসিডেন্টদের মতো মিত্র জোগাড় করে ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাকে কাজে লাগানোর ধারেকাছে যাননি তিনি। তাঁর প্রশাসনিক পদ্ধতিগুলোর মধ্যে রয়েছে শুল্কারোপ, দক্ষিণ চীন সাগরে স্বাধীন নেভিগেশন, কমিউনিকেশন নেটওয়ার্কে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আটকে দেওয়া, চীনা নাগরিকদের ভ্রমণ ও গবেষণায় বাধা দেওয়ার মতো বিষয়।
ট্রাম্পের তত্ত্ব হচ্ছে, মার্কিন মজবুত অর্থনীতি চীনকে মাথা নোয়াতে বাধ্য করবে। তাঁর পদ্ধতি কাজে লাগতে শুরু করেছে। তিনি টুইট করেছেন, ‘তারা হারছে এবং হারবে।’